বাক্য গঠন ও ব্যাকরণের মধ্যে পার্থক্য

বাক্য গঠন (Syntax):
বাক্যতত্ত্ব (Syntax) নামক ভাষাবিজ্ঞানের শাখায় বাক্যের গঠন নিয়ে আলোচনা করা হয়। আরও সঠিকভাবে বলতে গেলে একাধিক শব্দ কী নিয়মে যুক্ত হয়ে বৃহত্তর এককসমূহ (যাদের মধ্যে বাক্য প্রধানতম একক) গঠন করে এবং এই বৃহত্তর এককগুলোর বৈশিষ্ট্য কী, সেটাই বাক্যতত্ত্বের আলোচ্য বিষয়। বৃহত্তর খণ্ডবাক্য-সদৃশ এককে প্রদর্শিত আচরণের ওপর ভিত্তি করে শব্দসমূহের শ্রেণীবিভাগ, বাক্যের গঠনের ওপর শব্দের আভিধানিক (lexical) অর্থের প্রভাব, বিভিন্ন প্রকারের বাক্যের মধ্যকার বিধিবদ্ধ সম্পর্ক আবিষ্কার, ইত্যাদি বাক্যতাত্ত্বিকদের (syntactician) গবেষণার বিষয়।

আধুনিক বাক্যতত্ত্বে বিমূর্তন গুরুত্বপূর্ণ একটি ধারণা। ধারণা করা হয় প্রতিটি বাক্যের বহিঃস্থ ধ্বনিতাত্ত্বিক রূপ বা তলের বিপরীতে একটি গভীর সাংগঠনিক তল বিদ্যমান, এবং এই তলদ্বয় এক ধরনের “রূপান্তর” প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংযুক্ত। একটি ভাষায় বাক্য গঠনের মৌলিক বৈশিষ্ট্য ক্রম হল উদ্দেশ্য (এস), ক্রিয়া (ভি), এবং বিধেয় (ও) যা সাধারণত বাক্যের মধ্যে প্রদর্শিত হয়। প্রায় ৮৫% ভাষায় সাধারণত উদ্দেশ্য প্রথমে থাকে, ক্রমানুসারে এসভিও বা ক্রম এসওভি। অন্যান্য সম্ভাব্য অনুক্রমগুলি ভিএসও, ভিওএস, ওভিএস এবং ওএসভি তাদের মধ্যে শেষ তিনটি বিরল।

ব্যাকরণ (Grammar):
ব্যাকরণ একটি সংস্কৃত শব্দ যার ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হলো বিশেষভাবে বিশ্লেষণ করা। কোন ভাষাকে বিশ্লেষণ করলে সেই ভাষার উপকরণ এবং উপাদানগুলোকে পৃথকভাবে চিহ্নিত করে ভাষার অভ্যন্তরীন শৃঙ্খলা সম্পর্কে জানা যায়। ব্যাকরণ ভাষার শৃঙ্খলা রক্ষা করে নিয়ম-কানুন প্রণয়ন করে এবং তা প্রয়োগের রীতি সুত্রবদ্ধ করে। সুতরাং, ব্যাকরণকে ভাষার আইন বলা যায়। ব্যাকরণ শব্দটিকে বিশ্লেষণ করলে আমরা পাই – বি (বিশেষ) + আ (সম্যক) + √কৃ+ অন = ব্যাকরণ । এ বিশ্লিষ্ট অর্থ থেকে আমরা বুঝতে পারি যে ‘ব্যাকরণ’ হচ্ছে ‘শব্দ ব্যুৎপাদক ও ভাষা নিয়ামক শাস্ত্র।’

যে শাস্ত্রের সাহায্যে ভাষার স্বরূপ ও গঠণপ্রকৃতি নির্ণয় করে সুবিন্যস্ত করা যায় এবং ভাষা শুদ্ধরূপে বলতে, পড়তে এবং লিখতে পারা যায়, তাকে ব্যাকরণ বলে।

প্রত্যেক ভাষার মতো বাংলা ভাষারও নিজস্ব ব্যাকরণ আছে। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে, “যে শাস্ত্র জানলে বাংলাভাষা শুদ্ধরূপে লিখতে, পড়তে ও বলতে পারা যায় তার নাম বাংলা ব্যাকরণ। “

বাক্য গঠন ও ব্যাকরণের মধ্যে পার্থক্যঃ

বাক্য গঠন ও ব্যাকরণের মধ্যে অনেকাংশ অমিল রয়েছে। তাই নিচে বাক্য গঠন ও ব্যাকরণের মধ্যে পার্থক্য নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে-

১। বাক্য গঠন এমন নিয়মগুলির সেটকে বোঝায় যা শব্দ এবং বাক্যাংশগুলিকে সুসংগত বাক্য তৈরি করার পদ্ধতিটি সংজ্ঞায়িত করে। অন্যদিকে, যে শাস্ত্রের সাহায্যে ভাষার স্বরূপ ও গঠণপ্রকৃতি নির্ণয় করে সুবিন্যস্ত করা যায় এবং ভাষা শুদ্ধরূপে বলতে, পড়তে এবং লিখতে পারা যায়, তাকে ব্যাকরণ বলে।

২। ব্যাকরণ ভাষাবিজ্ঞানের একটি শাখা যা সিনট্যাক্স, রূপচর্চা, শব্দার্থবিজ্ঞান এবং শব্দবিজ্ঞানের সাথে সম্পর্কিত। অন্যদিকে, বাক্য গঠন ব্যাকরণের একটি অঙ্গ, যা শব্দটি বাক্য তৈরির জন্য ক্রমবদ্ধভাবে নির্দেশ করে।

৩। বাক্যবিন্যাস আপনাকে ঘোষণামূলক, জিজ্ঞাসাবাদের, নেতিবাচক, স্বীকৃত বা উদ্দীপক বাক্যের উপর ভিত্তি করে বাক্যগুলিতে শব্দগুলি কীভাবে সাজানো যায় তা জানায়।

অন্যদিকে, ব্যাকরণ সবই একটি যৌক্তিক এবং অর্থপূর্ণ বাক্য তৈরি সম্পর্কে। এটি আপনাকে জানাবে যে ভাষা কীভাবে কাজ করে এবং কীভাবে শব্দগুলিতে সংক্রামিত হয়।

৪। বাক্য গঠনটি হ’ল নীতি ও প্রক্রিয়াগুলির অধ্যয়ন যা এর মাধ্যমে শব্দ এবং বাক্য গঠনের অন্যান্য উপাদানগুলি একত্র করে ব্যাকরণগতভাবে সঠিক বাক্য তৈরি করা হয়।

অন্যদিকে, ব্যাকরণ আপনাকে ভাষাগুলির পাশাপাশি লেখার ক্ষেত্রেও ভাষা সংক্রান্ত আইন এবং ভাষা ব্যবহারের যথাযথ উপায় বুঝতে সহায়তা করে।