কথ্য ভাষা ও লেখ্য ভাষার মধ্যে পার্থক্য

কথ্য ভাষা (Spoken Language) :
মানুষে যে ভাষাগুলোতে কথা বলে, সেগুলো কথ্য ভাষা। বর্তমানে, বিশ্বের সব দেশ মিলে কথ্য ভাষার সংখ্যা ৬,০০০-র বেশি। প্রত্যেক সম্প্রদায়ের নিজস্ব কথ্য ভাষার নিজস্ব ব্যাকরণের নিয়ম থাকে। শিক্ষক যখন শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করেন, কিংবা কোনো বিশেষ অনুষ্ঠানে আমরা বক্তব্য উপস্থাপন করি তখন ভাষা ব্যবহারে সচেতনতা দেখা যায়। তাই বিশেষ পরিবেশ ও প্রয়োজনের বাইরে যখন ভাষা ব্যবহার করা হয় তাকে কথ্য ভাষা বলে। অথবা আমরা বলতে পারি, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সাধারণ যে ভাষায় কথা বলি তাই কথ্য ভাষা।

কথ্য ভাষার একটি বৈশিষ্ট্য হল অনানুষ্ঠানিক পরিবেশে বন্ধু কিংবা সহকর্মী বা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলাপচারিতায় এই কথ্য ভাষারূপ ব্যবহার করা হয়।

লেখ্য ভাষা (Written Language):
ভাষার যে মান্য রূপটি কোনো ভাষাভাষী গোষ্ঠীর মানুষ সর্বসম্মতভাবে লেখার জন্য ব্যবহার করে, তাকে বলে লিখিত ভাষা বা লেখ্য ভাষা। অর্থাৎ এই লেখ্য ভাষা প্রকাশ করতে লেখনি যন্ত্রে প্রয়োজন হয় উদাহরণস্বরূপ কালি, কলম, মোবাইল, কম্পিউটার ইত্যাদি। লেখ্য ভাষার দ্বারা মূলত বই পুস্তক চিঠি ইত্যাদি লেখা হয়। লেখ্য ভাষাকে আবার দুই ভাগে বিভক্ত। যথা- সাধু ভাষা এবং চলিত ভাষা।

কথ্য ভাষা ও লেখ্য ভাষার মধ্যে পার্থক্যঃ

বাংলা ভাষার কথ্যরূপ এবং লিখিত রূপের মধ্যে পার্থক্য উল্লেখযোগ্য। বাচনভঙ্গী এবং প্রকাশভঙ্গীতে ব্যাপক রূপান্তর লক্ষ্য করা যায়। কথ্য ভাষা ও লেখ্য ভাষার মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-

১। মানুষ নানা প্রয়োজনে কথা বলে। মুখ থেকে বের হওয়া এই ভাষা হল মৌখিক ভাষা। মুখের ভাষার সাহায্যে এক মানুষ অন্য মানুষের সঙ্গে সরাসরি ভাবের আদান-প্রদান করে। মুখের ভাষা বলা ও শোনার মধ্যে সীমাবদ্ধ।

অন্যদিকে, মুখের ভাষাকে লেখ্য রূপ দিলে তা হয় লিখিত ভাষা। লেখার জন্য মুখের উচ্চারিত ধ্বনিকে প্রতীক রূপ দেওয়া হয়। যেমন- অ, আ, ক, খ ইত্যাদি। এগুলোকে বলা হয় বর্ণ। বর্ণের সঙ্গে বর্ণের যোগে শব্দ হয়, শব্দ দিয়ে বাক্য তৈরি হয়। এইভাবে ধ্বনি প্রতীকের সাহায্যে ভাষা লেখ্য রূপ পায়।

২। কথ্য ভাষাতে ব্যাকরণের কড়াকড়ি নিয়ম মেনে চলা বাধ্যতামূলক নয়। অন্যদিকে, লেখ্য ভাষায় ব্যাকরণের নিয়ম মেনে চলতে হয়।

৩। কথ্য ভাষা এলাকাভেদে বদলে যায়। অন্যদিকে, লেখ্য ভাষার কোন এলাকাভেদে পরিবর্তন হয় না।

৪। কথ্য ভাষা আলাদাভাবে শিখতে হয় না; মানুষ তার জন্মের কিছুদিন পর থেকে পরিবেশ থেকেই শিখে যায়। অন্যদিকে, লেখ্য ভাষা আলাদা করে শিখতে হয়।

৫। কথ্য ভাষায় বাক্যের গঠন অনেক সময় এলোমেলো হলেও চলে। অন্যদিকে, লেখ্য ভাষায় বাক্যের গঠন ব্যাকরণসম্মত হতে হয়।

৬। প্রতিটি ব্যক্তির কথ্য ভাষায় কম-বেশি পার্থক্য দেখা যায়। অন্যদিকে, একই ভাষাভাষীর ক্ষেত্রে তেমন পার্থক্য দেখা যায় না।

৭। কথ্য ভাষায় ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। অন্যদিকে, লেখ্য ভাষায় ভুল হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

৮। ধ্বনি ও শব্দার্থ পরিবর্তনের মাধ্যমে ভাষাকে গতিশীলতা দেয় কথ্য ভাষা অন্যদিকে, লেথ্য ভাষা ভাষার রূপকে স্থিতিশীলতা দেয়।